THE POEMS OF ARSHAD ULLAH IN BENGALI

PLEASE READ MY POEMS AND OTHER WRITINGS

আমার ভাবনাগুলি

2019-10-02 17:45:53 | poem
হৃদরোগ
Myocardial infarction
আরশাদ উল্লাহ্‌

আমার বন্ধু মহলের প্রায় সবাই জানেন যে কয়েকবার মারাত্মক অসুস্থ হয়ে এম্বুলেন্সে বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অতিথি হয়েছি। ছাত্র জীবন থেকেই আমি একজন ক্রনিক হৃদরোগী। আমরা সবাই রোগমুক্ত থাকতে চাই। তা সম্ভব হয় না। প্রতিটি লোক জীবনে একাধিকবার রোগে আক্রান্ত হন। সে রকম আমিও একজন। এটা আমাদের সবার নিয়তি। তবে রোগের একটা সীমাবদ্ধতা থাকা দরকার। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে সে সীমাবদ্ধতাও থাকে না। আমি ক্রনিক হৃদরোগী। মাঝে মাঝে নিজেকে ধিক্কার দেই। কিন্তু যখন আমার চেয়েও আরো বেশি রোগাক্রান্ত লোক ও প্রতিবন্ধীদের দেখি - তখন নিজেকে প্রবোধ দেই।

ছাত্রজীবনে আমার হৃদকম্প (Atrial fibrillation) ছিল। বয়স কম ছিল বলে বড় বেশি পাত্তা দেই নি। কিন্তু আমার মা জননি ও বড় ভাই বোনেরা আমার জন্য চিন্তিত থাকতেন। ডাক্তার বদলিয়ে অন্য ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতেন। তখন পাকিস্তান আমল। ডাক্তারগণ ছিলেন সিরিয়াস। ব্যতিক্রম যে ছিলনা তা নয়। তবে সিরিয়াস ডাক্তারের সংখ্যা সে আমলে বেশি ছিল। যাদের নিজ চোখে দেখেছি। তারা রোগীর পকেটে কত টাকা আছে জিজ্ঞাসা করতেন না। রোগ ধরার জন্য উঠে পড়ে লাগতেন। সেই আমল থেকে বর্তমান জমানার তফাৎ ৫০ বছর। এখন বিজ্ঞানের বদৌলতে অনেক উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। উন্নত দেশগুলিতে অর্গান ট্রান্‌স্প্লান্ট ও করা হয়।

আজকের লেখায় আমার হৃদরোগের সাথে অব্যাহত যুদ্ধ করে যাওয়ার কথা কিছু বলব। এ লেখা পড়ে অনেকে উপকৃত হবেন আশা করি।
হৃদরোগ অনেক প্রকার। আমার হার্টের রোগটা যখন দেখা দেয়, তখন "অস্বাভাবিক হার্ট বিট" - কখনো দ্রুত, কখনো থেমে থেমে হত। ১৯৭০ এর দশকে উন্নত ঔষধ ও চিকিৎসা যে ছিলনা তা বলাই বাহুল্য। আমার রোগ দেখা দেওয়ার পর এম বি বি এস বা এল এম এফ পাশ নয়, অথচ অত্যন্ত জনপ্রীয় একজন ডাক্তারের নিকট গেলাম। তাঁর নাম ছিল বিনয় ভূষণ দেব। বৃদ্ধ ডাক্তার। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত ডাক্তার ছিলেন। যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন সর্দি বা এলার্জি হলে তাঁর নিকট যেতাম।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর চট্রগ্রামে তাঁর ক্লিনিক খুঁজে পেলাম। কোন ব্লাড টেস্ট, এক্স-রে ছাড়াই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে মাত্র একটি টেবলেট দিলেন। সেটা সেবন করে কয়েক বছর ভাল ছিলাম। ইতিমধ্যে এই ডাক্তার মৃত্যু বরণ করেছেন। বলাই বাহুল্য যে আমার এই রোগের কথা ঘরের সদস্যরা ছাড়া কেউ জানত না। আমিও কাউকে বলতাম না। পড়াশুনা, খেলাধুলাও করতাম। ১৯৮০ সালে জাপানে আসার আগ পর্যন্ত কোন ডাক্তার আমার রোগ নির্নয় করতে পারেন নি এবং আমাকে কোনদিন বলেন নি যে তোমার হৃদরোগ।

১৯৮০ সালে পি এইচ ডি প্রোগ্রামে জাপান আসার পর আমার রোগের কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। আমার অসুস্থতার কথা কোনদিন আমার টীচারকেও বলি নি। কারণ, জীবনের নিকট পরাজয় মেনে নিতে চাইনি আমি। ১৯৮৪ সালে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করার পর দু'বছর গবেষোণাগারে চাকুরিরত ছিলাম।

১৯৮৬ সালে প্রথম বড় ধরণের হার্ট এটাক হল। কিন্তু ব্যথা নেই। ভোর ৪টা বাজে। প্রথমে স্ত্রীকে নিদ্রা থেকে জাগাই নি। ভেবেছি কিছুক্ষণ পর হার্ট-বীট নরম্যাল অবস্থায় ফিরবে। কিন্তু আধা ঘন্টাতেও ফিরলনা দেখে স্ত্রীকে এম্বুলেন্স ডাকতে বললাম।

ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, Atrial fibrillation. তারপর ৬ দিন হাসপাতালে আই সি ইউ তে ছিলাম। কোন ওপারেশন হয়নি। তবে সব ব্যবস্থাই রেডি ছিল। ছয় দিনের দিন ডাক্তার ঔষধ দিয়ে আমাকে রিলিজ অর্ডার দিলেন। তারপর ২০১২ সালে নিউমোনিয়া হয়েছিল। আর, গত জুলাইয়ের ২৮ তারিখ রাতে ৩২ বতসর পরে আবার হার্ট এটাক হল। এবার সর্ব প্রথম হার্টে ব্যথা অনুভব করলাম। রাত ২টায় হাসপাতালে এম্বু‌লেন্সে গেলাম। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, Myocardial infraction, অবাক হলাম, এতদিন চিকতসা চলছিল Atrial fibrillation এর। এখন আমি ভিন্ন জাতের হার্টের রোগী। পুর্বে 'ব্লগ' কথাটি উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু তা নয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নতুন ডাক্তার পরীষ্কার করে বুঝিয়ে দিলেন 'ব্লগ' নয়, Myocardial infarction.!
পাঁচটি ব্লগের কথা উল্লেখ করেছিলাম। ২৮ জুলাই ডাক্তার সহজ ভাষাতে ব্লগ বলেছিলেন। ( হ্যাঁ, এটাকেও এক ধরণের ব্লগ বলা যেতে পারে।)

Myocardial infarction কি ধরণের হার্টের রোগ এ ব্যাপারে সামান্য ধারণা দিতে চাই। হার্টের অনেক আর্টারি, ভেইন রয়েছে। সেগুলিতে রক্ত সঞ্চালন হয় এবং হার্টকে সুস্থ রাখে। কোন কারণ বশত যদি সেগুলিতে রক্ত সঞ্চালনের ব্যাঘাত হয় তখন ব্যথা শুরু হয় এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমে কম ব্যথা হয়। পরে আস্তে আস্তে বাড়ে। বিশ্রাম নিলে কমে যায়। (আমার বেলাতে প্রথম অবস্থায় এমন হয়েছিল।)

২৮ জুলাই রাতে ব্যথা কমেনি বরং ক্রমাগতভাবে বাড়ছিল। তাই রাত ২টায় হাসপাতালে ভর্তি হলাম। এদেশের হাসপাতালে ডাক্তার এবং নার্সগণ সৈনিকের মত প্রস্তুত থাকে। রোগী যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলম্ব না করে রোগী নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকে।
পরীক্ষা শেষে ১১ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। কোন রিং সেট করেনি। তার ঢুকিয়ে জ্যাম হয়ে যাওয়া আর্টারিগুলিটে বিশেষ ঔষধ স্প্রেকরে পরীষ্কার করে দিলেন ।

জ্যাম হয়ে যাওয়া আর্টারি বা ধমনি যথাশীঘ্র পরীষ্কার না করলে এবং রক্ত সঞ্চালিত না হলে খোদ হার্টের টিস্যু মরে যায়। এমন অবস্থা হলে পরিত্রাণের কোন উপায় থাকে না।

২০১৫ পর্যন্ত আমেরিকাতে ১৫.৯ মিলিয়ন লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং বছরে ১০ লক্ষ লোক আক্রান্ত হয়।

আমেরিকার এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে মহিলারা ৬৫ বৎসর এবং পুরুষেরা ৪৫ বৎসর বয়সের পর Myocardial infarction রোগে আক্রান্ত হয়। এই ব্যবধানের কারণ জানা যায় নি। তবে এই রোগ অতিরিক্ত মদ্যপানে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস,অতিভোজন ও তৈলাক্তজাত খাবার বেশি খেলে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মধ্য বয়স্ক লোক, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং গড়ে এক ঘন্টা সকাল বিকাল হাঁটাহাঁটি করেন - তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

দীর্ঘকাল রোগাক্রান্ত থেকেও বিশেষ করে হৃদরোগ নিয়ে কি করে এখনো বেঁচে আছি? নিজেই বার বার নিজেকে প্রশ্ন করি। লেখাপড়ার পর্ব এই রোগ নিয়ে করেছি। কষ্ট হয়েছে। কিন্তু টীচারকে বুঝতেও দেই নি।
যারা হৃদরোগে আক্রান্ত তাদেরকে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ দিতে চাই। হয়তো আমার পরামর্শে তারা উপকৃত হবেন।

১। শুধু মাত্র ডাক্তার ও ঔষধ সেবনে সুস্থ থাকা যায় না। নিজেকেও সচেতন থাকতে হবে। দুর্ভাবনা না করে ডায়েরি লিখা, বই পড়া, গল্প লেখা, গান গাওয়া বা প্রিয় গায়কের গান শোনা, প্রিয় জনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, ভালবাসা বজায় রাখা, শিশুদের আদর করা ও তাদের সাথে খেলাধুলা করা, ভাল ও সুন্দর মনের মানুষের সাথে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব স্থাপন করা। বন্ধুদের সাথে কথা বলে মানসিক ক্লান্তি সারানো যায়।

২। ব্যায়াম করা, হালকা ব্যায়াম, হালকা খাবার, মিষ্টি কম খাওয়া, সবজি ও মাছ বেশি খাওয়া। ছোট মাছ খাওয়া; পুটি শুঁটকি জাতীয় ছোট মাছের শুঁটকি সবজির সাথে রান্না করে খাওয়া। সকালে ২ গ্লাস পানি পান করা। ঘুমাবার পূর্বেও এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাওয়া।

৩। পশু পাখিকে ভালবাসা এবং যত্নের সাথে পোষা। ছাগল, কুকুর, বিড়াল এবং মুরগি পালন করা। এগুলি কেন করতে হবে ভেবে দেখুন। মনে রাখবেন যারা সারাক্ষণ রোগের চিন্তা করেন তারা বেশিদিন বাঁচেন না। এই পোশা পশু পাখি আপনাকে ব্যস্ত রাখবে এবং মানসিক ক্লান্তি কমে যাবে।

৪। নামাজ পড়া। অন্তত এশার নামাজ নিবিষ্ট মনে পড়লে রোগের উপশম হবে। দুর্ভাবনা কমে যাবে এবং ভাল ঘুম হবে।

পৃথিবীতে সবাইকে মরতে হবে। তবে সুস্থ থেকে সবাই যাতে পূর্ণ হায়াত পেয়ে মৃত্যু বরণ করেন - এই কামনা করি।

*All rights reserved by the writer.
2 October 2019
No photo description available.

コメントを投稿