THE POEMS OF ARSHAD ULLAH IN BENGALI

PLEASE READ MY POEMS AND OTHER WRITINGS

সে পথে আবার

2020-07-29 12:48:26 | poem
সে পথে আবার 
আরশাদ উল্লাহ্‌ 
ছেলেবেলার খেলাধুলার শত ধুলিকণা
ফেলে আসা মেঠো পথে আগলে ধরে,  
আজো লেগে থাকে - সে পথে যেতে 
জুতা মোজা কাপড়ে । 
যুগ যুগ পৃথিবীর শত পথ হেঁটে এসে 
জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে যত ব্যর্থতা  
 আর  প্রত্যাশার স্বপ্ন - অতীতের স্মৃতিকথা, 
অনেক গল্প – কবিতা, গান আর পথের    
ধূলিকণা, কাদা, মনের আকাশে ভাসে। 
অবসন্ন ক্লান্ত মন আমার চলার গতি দেয় থামিয়ে,  
বটের ছায়াতে বসে শুনি - পাতার হাহাকার ধ্বনি, 
অতীত কি কখনো ফুরায় - অতীতের কোলে? 
এক যুগ আগে তুমি সতর্ক পদক্ষেপে এসে
 যুবতি-সুলভ অনুরাগে ভোর প্রভাতে দিয়েছিলে
এক ঝুড়ি সতেজ সুগন্ধি শুভ্র বকুল! 
বুকের ভিতরে জেগেছিল অমিত উচ্ছ্বাস- 
তোমার নিমেষের দানে - তৃষ্ণার্ত এ প্রাণে ।  
সে স্মৃতি ধরে রেখেছি আজো মনের কোণে । 
এ বরষা বড় বিষণ্ন বিরহে মলিন, বড় একা-
 আজ আমার - একান্ত শূন্য ক্ষীণ প্রাণ ।  
এ পথে যেতে কেবলি তোমাকে মনে পড়ে । 
আমাদের খালী পায়ে হেঁটে যাওয়া সেই পথের-  
ধূলিকণা, বালি, কাদামাটি, এখনো ছড়িয়ে আছে, 
অতীতের সুখ-স্মৃতি হয়ে। 
অতীত কখনো ফুরায় না,  যুগের পর যুগ- 
জেগে থাকে নিরবে হৃদয়ের কোণে,   
সে  পথে তোমার আমার পদচিহ্ন আজো যায়নি মুছে, 
সব অভিমান অন্ধকার দ্বিধা ছিড়ে আবার আসো  ফিরে,  
হৃদয়-দুয়ার রয়েছে খোলা - সেই স্মৃতির খেলা ঘরে ।
২৮ জুলাই, ২০২০ 

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে “সংগ্রাম”, যুদ্ধ নয় " অন্যোন্যজীবিত্ব।

2020-05-05 14:57:31 | poem


এ কথাটি বলেছেন জাপানের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের   প্রফেসার ড. তারো ইয়ামামতো। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম চলছে তা যুদ্ধের সমতুল্য। নতুন করনাভাইরসের উত্থান সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করেছে। প্রফেসার ইয়ামামতো  এক সাক্ষাৎকারে করোনাভাইরাস সম্পর্কে অতি মূল্যবান কিছু কথা বলেছেন।তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাপান এন এইচ কে নিউজের পক্ষ থেকে মিস মায়ুকো ওয়াকুদা। 
ডক্টর ইয়ামামতো বলেন, “ করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে যুদ্ধের পরিবর্তে আমাদেরকে ভাইরাসের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।  প্রফেসার ইয়ামামতো বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগের শীর্ষ গবেষক। তিনি বলেন, “সে যাই হোক, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে মহামারী চলছে তাতে বিভিন্ন সমস্যা উত্থিত হয়েছে – যা আমাদের সংকটবোধের বাহিরে চলে গেছে।  যা নাকি সাধারণত সংঘটিত হয় না – তা নিয়ে আপনারা অধিক টেনসনে থাকেন না। এখন সম্ভবত এমন একটি প্রচিচ্ছবি সৃষ্টি হয়েছে যে আমি সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ তার পূর্বাভাস দিতে পারতাম এবং তাহলে সাধারণ জনতার মনে সে সংকটবোধ পূর্বেই জাগ্রত থাকত। “ 
ওয়াকুদা প্রফেসার ইয়ামামতোকে প্রশ্ন করেন, ‘জাপানে সংক্রামিত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আপনি এখন এই  সংক্রমণের পর্বটি কোথায় দেখছেন?’ 
প্রফেসার জবাবে বলেন, “ প্রথমত  সামাজিক অবকাঠামোর পতন রোধ করা। আমি মনে করি না যে এখন কোন সর্বরোগ নিবারক ঔষধ আছে। আমি মনেকরি যে ছোট ছোট জিনিষগুলিকে গাদা করে এই মহামারীর মুখামুখি হওয়া সম্ভব।  
মিস   ওয়াকুদা বলেন,   “প্রথমত, ভাইরাসগুলি প্রাকৃতিক জগত থেকে এসেছে।“  
প্রফেসর ইয়ামামতো বলেন,” হ্যাঁ, বাস্তুসংস্থায় মানুষের বিশৃঙ্খলা, বিশ্ব উষ্ণায়ন,  গ্রীষ্মমন্ডলীয় বৃষ্টিপাতের  পরিমাণ হ্রাস,   এ সব কারণগুলির জন্যে মানুষ এবং বন্য প্রাণীর মধ্যকার দূরত্ব কমে গেছে।সে কারণে,  বন্য প্রাণীদের দ্বারা ভাইরাসটি মানুষকে সংক্রমিত করতে পেরেছে এবং মানব সমাজে ভাইরাসটি অতিরিক্ত  সংক্রামক হয়ে এসেছে। মানব বিকাশের নামে ইকোসিস্টেমে (জৈবিক সম্প্রদায়ের বসবাসের নির্দিষ্ট পরিবেশ) পা রাখে এবং ক্রমাগত  মিথস্ক্রিয়াশীল জিবদের  সাথে মানুষের মিশ্রণ এবং বাস্তুসংস্থান হয়েছে – যে স্থানে বন্য প্রাণীরা  মূলত বাস করত।তাছাড়া বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেও মানুষ এবং বন্য প্রাণীদের  বাসস্থান অনেক  সংকীর্ণ হয়েছে। আমি মনে করি যে এসব কারণগুলির জন্য সংমিশ্রণ ঘটেছে। মানুষ এবং বন্য প্রাণীগুলির মধ্যকার দূরত্বকে বেশ ঘনিষ্ঠ করেছে। এসব পরিবর্তনের জন্য  ভাইরাসগুলি মানুষের মধ্যে আসতে পেরেছে।  আমি  মনে করি যে আরো কিছু কারণে ভাইরাসগুলি  মানুষের মাঝে এসেছে। সেগুলি হলঃ  বিশ্বায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন নতুন শহরের সৃষ্টি  এবং জীব-জানুয়ারের পাশাপাশি মানুষের চলাফেরা ও জীবনযাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার কারণে যুগপত বিশ্বব্যাপী মহামারীর সৃষ্টি হয়েছে।“
প্রফেসার বলেন, “মানুষের এমন কর্মকান্ডের ফলে মানব সমাজে এক অজানা ভাইরাসের আবির্ভাব হয়েছে। অতীতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন কেমন করে মহামারীর কারণে মানব সমাজে পরিবর্তন এসেছে। মধ্যযুগীয় মহামারী প্ল্যাগ রোগে ইউরোপীয় সমাজে বিপ্লব ঘটিয়েছে। প্ল্যাগ রোগ ইউরোপের জনসংখ্যা এক তৃতীয়াং শ কমিয়েছিল। তখন গীর্জা কর্তৃপক্ষ তা সামলাতে পারেনি বলে তার পতন হয়, অন্যদিকে জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থান হয়েছে। ইয়ামামতো বলেন, “ সেটা হওয়াতে ইউরোপে মধ্যযোগীয় সংস্কৃতির অবসান হয়েছে এবং আধুনিকতা বিকাশ লাভ করেছে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা যে সম্ভবত এই নতুন করোনাভাইরাসের অবসান হলে পৃথিবীতে আরেকটি পরিবর্তন আসবে, হয়তোবা নতুন এক পৃথিবীর আবির্ভাব হবে । 
 মিস ওয়াকুদা প্রশ্ন করেন, ‘যারা এখন উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন – তারা কি তাদের নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে?’ 
প্রফেসার ইয়ামামতো বলেন, “সে পরিবর্তন কিভাবে হবে সেকথা বাদ দিয়ে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনেকরি যে উন্নয়নের সর্বোচ্চ স্তরে মূল্যবোধে পরিবর্তন চলছে। এটি কোন প্রগতির বিকাশ নয়, তবে আমরা পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে ক্রমাগত ভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছি, অথবা আমরা এর মধ্যে জীবন যাপনের উপায় অনুসন্ধান করছি। আমি মনেকরি এটাকে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ থেকে আলাদা করে মূল্যায়ন করা উচিত। আমার ধারণা, সম্ভবত একটি টেকসই সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজন। তা হল,  সংক্রামক রোগগুলি মোকাবিলা করতে মানব দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন। যে কারণে মানবজাতি পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশে বসবাস করতে সক্ষম হয়েছে। সেই অর্থে যে দিকটি আমাদের লক্ষ হওয়া উচিত – তা হল, একটি সামাজিক দল হিসাবে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অর্জন করা এবং এই করোনাভাইরাস থেকে যথাসম্ভব মানবজাতির ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা।“    

প্রফেসার ইয়ামামতো তাঁর লেখা একটি বই, “ Needs to coexistence with virus.”  
ভাইরাসগুলির সাথে সহাবস্থানের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছেন মিস ওয়াকুদা, “ বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভাবলে বুঝতে পারি যে জাপান সহ সমগ্র বিশ্বের মানুষ প্রতিদিন এ ভাইরাসের সংক্রমণে ভোগছে। আমাদের সহাবস্তানকে মেনে নেওয়া মুস্কিল। আমরা কেমনে আপনার চিন্তাধারা মেনে নিব?
উত্তরে প্রফেসার ইয়ামামতো বলেন, “যতদিন পর্যন্ত আমরা প্রকৃতির একটা অংশ হয়ে রইব – সংক্রামক রোগও ততদিন থাকবে। আমি মনে করি যে যেহেতু ভাইরাসগুলি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নয়, আমাদের অন্য কোন পন্থা নেই। যেহেতু ভাইরাস নির্মূল করা সম্ভব নয়, সংক্রামক রোগও থাকবে। 
এমন অবস্থায় এটাকে ভাইরাস নির্মূলের সর্বাত্মক যুদ্ধ যলা যায় না। তাই মানবজাতিকে সহাবস্থানে থাকতেই হবে এবং একই সময়ে সংক্রামক সংক্রামক ভাইরাস থেকে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে হবে। আর, আমি মনে করি ভাইরাটি মানবজাতিকে অতিক্রম করে যাচ্ছে কিনা তা বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভাইরাসকে মানব সমাজে অন্তর্ভূক্ত করে যথা সম্ভব ক্ষয়ক্ষতি কমাতে হবে। আর, এই কাজটি করতে হবে মানব দেহে ভাইরাস প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে। তা হলেই মানবজাতি রোগ প্রতিরোধে শক্তিশালি হবে। আমার মতে এই ধরণের দৃষ্টিভিঙ্গির প্রয়োজন আছে। আমি আরো মনে করি যে আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হবে মানবজাতির প্রতি ভাইরাসটিকে শক্তিশালি হতে না দেওয়া এবং তার সংক্রামক শক্তি হ্রাস করে দিয়ে সাথে ‘মিথোজজীবী (symbiotic)  সম্পর্ক স্থাপন করা।
মিস ওকুদাঃ নির্মুল করা যথেষ্ট নয়। 
প্রফেসার ইয়ামামতো বলেন, “ এটাকে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে যাতে  এটি মানুষের ক্ষতি বা সামাজিক ক্রিয়াকলাপ ভেঙে দিতে না পারে,, শুধুমাত্র  সংক্রামক রোগের অস্তিত্ব নয়। আমরা যদি সামাজিক ক্রিয়াকলাপ ব্যাহত না করি। আমরা ভালভাবেই সক্ষম হতে পারি। সে লক্ষ্যে, আমি বিদ্যমান জ্ঞান বা প্রযুক্তি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। 

মিস অয়াকুদা জিজ্ঞাসা করলেন,  “সে ধরণের  আশা কোথায় পাবেন?  সংক্রামক রোগের মহামারী এখন বিভ্রান্তিকর। আপনি যদি আমাদের সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা খুঁজে পান তবে আপনি সেটা কোথায় পাবেন?
অধ্যাপক ইয়ামামোতো বলেন, “এটি বড় কঠিন প্রশ্ন, এটার প্রকৃত উত্তর নাও থাকতে পারে। তবে প্রতিটি ব্যক্তি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা করে। আমি মনে করি যে  কেবলমাত্র একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কল্পনা করেই এই কাজটি তারা করতে পারে। আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার   হতে পারে একথা ভেবেই - আমি মনে করি যে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত দ্রুত আসবে না। সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আশা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে আমি আফ্রিকাতে গিয়ে এইডসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, কিন্তু তা কার্যকর হয় নি। কারণ (রোগী)  ১০ বছর পরে কি হতে পারে, সেকথা কল্পনা করতে পারে না। যদি ১০ বছর পরে, আপনি অনাহার, সহিংসতা বা এইডসের পরিবর্তে যুদ্ধের কারণে মারা যান, "আসুন এখনই এইডস্‌ প্রতিরোধ করুন যাতে আপনি এখন থেকে ১০ বছর বেঁচে থাকতে পারেন" এই ভাবনা দুর্বল।  আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করি যে সমাজ এখন কেমন এবং কীভাবে সেটার পরিবর্তন হবে এবং প্রতিটি ব্যক্তি এখন মনে কী ধরণের আশা পোষণ  করছে। সেই অর্থে, এটি বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তবে আমি মনে করি যে এই পরিস্থিতি পরবর্তীতে আমাদের আশার আলো দেখাবে। এমন যখন ভাবি, মনে প্রশ্ন জাগে। তারপর মানব সমাজ পরিবর্তিত হয়ে কি ধরণের সমাজে পরিণত হবে।“  
আরশাদ উল্লাহ্‌
(মাইক্রবায়োলজিষ্ট)
জাপান। 

poem কবিতা

2019-10-19 10:43:20 | poem
তুমি যেখানে যাও আমি গন্ধ পাই,
তোমার মিষ্টি ঘ্রাণে নেশা জাগে প্রাণে,
অনুভবে ধমনীতে তীব্র তরঙ্গ জাগে
আকাঙ্ক্ষায় বুকে চেপে চুমু খাই,
তোমার মুখের রঙ বদলে লালে লাল,
বুকের দুটি নীল পদ্মকলি স্বপ্ন-কবিতা!
তুমি টের পাওনা- হাত বুলাই-
আমি তোমার মধু খাই প্রতি স্বপনে,
নিরবে তুমি এসে যখন হাত বুলাও-
আমার তৃষ্ণার্ত বুকে...❣
19 Oct.2019

poem কবিতা

2019-10-18 15:56:55 | poem
তারা আসছে ধেয়ে
আরশাদ উল্লাহ্‌

আর দেরী নয় সময় নেই হাতে
হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার আসছে ধেয়ে
রক্তখেকো জানোয়ার দল বেঁধে
সাগরের ওপার থেকে!
আসছে হায়েনারা বায়না নিয়ে
শান্তির ঘরদোর ভেঙ্গে দিতে
রক্তের লিপসায় অর্থের লালসায়
আধুনিক রণসাজে মারণাস্ত্র হাতে
মানুষের শান্তি কেড়ে নিতে!
তারা আসছে ধেয়ে-
রক্তের হোলি-খেলায় মেতে
আকাশ জলপথে দ্রুতবেগে!

যুদ্ধ হত্যা পরস্পরের সম্পূরকতা
আদিকাল থেকেই - মানুষে মানুষে
রক্তপাত রাজ্যে রাজ্যে - নরহত্যা
চলছে, আত্মঘাতী সংঘাত সন্ত্রাসে
অদ্যাবধি, কোন কালে ছিল কি
পৃথিবীতে শান্তি কিংবা সম্পৃক্ততা?

চলছে নির্বিচারে হত্যা দেশে দেশে
যুদ্ধ কি থেমে গিয়েছিল কখনো
কালের কোন - লিখিত ইতিহাসে?
যুগে যুগে শান্তির যত সংজ্ঞা
সেই আদিকাল থেকে – অক্লেশে
কত চিন্তাবিদ মনীষী দার্শনিক-
জ্ঞানগর্ভ যুক্তিতে বোধক শাস্ত্রে
যুদ্ধের বিপরীতে - শান্তির বাণী
যুদ্ধবাজেরা - করেছে অবজ্ঞা!

হাজার বছর পরেও-
বুদ্ধদেব জীবিত ছিলেন অদ্যাবধি
তাঁর অহিংসার বাণীর ‘পরে;
নারী শিশু বৃদ্ধদের হত্যা
নারী ধর্ষণে – আরাকানে
নির্বিচারে, শিশুদের চিৎকারে
তিনিও গেলেন বহু দূরে সরে!

মানুষের মুখোশ পরা হায়েনা
যুদ্ধের আগুনে দানবীয় উল্লাসে
ঘরবাড়ি পথঘাট ধ্বংস করে
আমাদের রক্ত শুষে নিতে,
তারা আসছে ক্ষিপ্রবেগে অভিলাষে
ইরাক সিরিয়া ধ্বংস করে!

আহা সিরিয়ার শত নারী শিশু
বাঁচতে গিয়ে আশ্রয় খুঁজে খুঁজে
দিয়েছে প্রাণ সাগরে,
পদভ্রজে যেতে-
অনাহারে গিয়েছে মরে,
অনন্ত যাত্রা পথে!
বাকি যারা ছিল দেশে মাথা গুঁজে
টমাহক মিসাইল আর ক্লাস্টার বোমাতে
ছিন্নভিন্ন, দালানের ভগ্নস্তূপে মিশে গেছে!
যুগে যুগে নির্যাতিত নারী - পথে প্রান্তরে
যুদ্ধের বাজারে - নিলামে উঠেছে!
পৃথিবীর আধুনিকতার অন্ধকার প্রতিচ্ছবি!

হায়েনারা উল্লাসে করে নেশা
শুঁড়িখানায় বসে,
হুইস্কি ব্রান্ডি আর ভদকায়
ব্রান্ডের রঙ্গিন গ্লাসে!
চলে দর কষাকষি অস্ত্রের-
তুরুপের তাশে ফুর্তির আড্ডায়,
বাজার চাঙ্গা হয় রাতারাতি,
চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর হয়ে যায়
রকমারি মারণাস্ত্রের; তারপর-
যুক্তি করে বেনিয়ার জাতি
যুদ্ধের ঝান্ডা উড়ায়
শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশে দেশে!
১৮ অক্টোবর, ২০


poem কবিতা

2019-10-18 15:54:15 | poem
কাউকে বলিনি আজো
আরশাদ উল্লাহ্

দু’চোখের মিলনে গ্রাম্য নদীর খেয়া ঘাটে
অব্যক্ত মনের জড়তা- গিয়েছিল কেটে!
ছোট নদীর নড়বড়ে পানসী খেয়ার রশি টেনে
স্রোতস্বিনীর মধ্যিখানে যখন গিয়েছি –
তোমার উড়নার একাংশ উড়ে আমার চোখ ঢেকেছিল!
লজ্জা পেয়ে তুমি বারংবার বলেছিলে, ‘দুঃখিত, দুঃখিত!’
প্রতিউত্তরে কিছু বলিনি, উড়নাতে তোমার বুকের সুবাস –
বকুলের গন্ধের মতো মনে হয়েছিল।
অদূরে নদীর পারে সাদা বক গপ্‌ করে মাছ ধরে খাচ্ছে,
সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে নির্দিধায় বলেছি, ‘কেউ দেখেনি-
শুধু একটি বক মাছ ধরে খেয়েছে - এদিকে তাকায়নি!’ ’
তুমি খিলখিল হেসে ওপারে পা রাখতে পিছলে পড়ে গেলে,
বই খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে……
গ্রামের বুড়ো নিকুঞ্জ শাস্ত্রি দেখলে বলত, ‘যাত্রা ভঙ্গ!’
আমরা তো কোথাও যাচ্ছিলাম না, দৈবাৎ প্রথম দেখা!
তোমার হাত ধরে প্রথমে - টেনে দাঁড় করিয়েছিলাম,
টাল সামলাতে না পেরে বুকে লেগেছে তোমার মুখ;
কপালের ঘামের গন্ধ তোমার আজো বুকে মাখা –
মাঝে মাঝে স্মৃতির সে ঘ্রাণ - আমার পরম সুখ!
তোমার সে ঘাম আর বকুলের ঘ্রাণ নির্লিপ্ত প্রাণে-
মৌসুমি বায়ু হয়ে এসে মৃদঙ্গের ধ্বনি হয়ে বাজে,
মনে মনে তুমি চলে আসো গানের সুরের মাঝে।
একথা তোমার-আমার, কাউকে বলিনি আজো।
১৭ অক্টোবর ২০১৯


আমার ভাবনাগুলি

2019-10-16 11:01:32 | poem
হ্যালোইন উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে আমার নাতনী পাট্রিসিয়া ক্যানাডার ভ্যাংকুভারে। এই উৎসবটির ইতিহাস অতি প্রাচীন। খ্রীষ্টপূর্ব পাঁচ শাতাব্দী থেকে খ্রীষ্টপূর্ব এক শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপ ও এশিয়ার একাংশের লোকেরা হ্যালোইন উৎসব পালন করত। এই উৎসবের উদ্দেশ্য ছিল - অশুভ অপশক্তি যাতে জনগণের কোন ক্ষতি করতে না পারে - সে বিশ্বাসে উৎসবটি পালন করত। Pre - Roman আমলে Bronze age শুরু হওয়ার প্রারম্ভে এই প্রথার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
পরবর্তি সময়ে রোমান এবং জার্মানিদের দ্বারা এই প্রথা বিলুপ্ত করা হয়।

হ্যালোইন উৎসবের ব্যাপারে আমার মোটেও ধারণা ছিলনা। ১৯৮২ সালের দিকে জাপানে আমাদের এক প্রতিবেশি অ্যামেরিকান মিসেস নান্সি শরতের একদিন বড় আকৃতির মিষ্টি কুমড়ার ভিতরের অংশ বের করে নাইফ দিয়ে কুমড়াটিতে সুন্দর ডিজাইনে বিভিন্ন আকৃতির ছেঁদা করে মুখোশ বানিয়ে সেটার ভিতরে মোম বাতি জ্বালিয়ে রাত ৮টায় দরজায় এসে টোকা দেন। সঙ্গে তার ছোট ৫ বৎসর বয়সের একটি সন্তানও ছিল। বাহিরে অন্ধকারে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। দরোজা খুলে অদ্ভুত কুমড়ার সে মুখোশ দেখে ভয় পেয়ে প্রথমে মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না। নিরবতা ভংগ করে নান্সি স্বশব্দে হেসে বললেন, "ভয় পেয়েছ?"
লজ্জা পেয়ে বললাম, 'সামান্য'।
তারপর হাসাহাসি করে হ্যালোইনের গল্প বলেছিলেন। সেদিন প্রথম হ্যালোইন উৎসবের উপর আমার ধারণা হয়।

হ্যালোইন উৎসব ইউরোপে বিলুপ্ত হলেও এখন তা অ্যামেরিকাতে ব্যাপক ভাবে পালন করে। আমার নাতনি পাট্রিসিয়া ক্যানাডাবাসি হলেও প্রতিবছর ক্যানাডাতেও এই উৎসব চলছে। গত বৎসরও হ্যালোইনের ছবি পাঠিয়েছিল। সেগুলি ফেসবুকে পোষ্ট করিনি। আজ সকালে আবার পাঠিয়েছে। তাই ভাবলাম এই উৎসব নিয়ে কিছু লিখব।
এখন শরতকাল। উৎসব হবে ৩১ অক্টোবর। হয়তো অনেকে জানেন না যে অ্যামেরিকা ও ক্যানাডাতে আবাদ না করলেও খালি মাঠে অনেক মিষ্টি কুমড়া প্রকৃতি থেকে জন্ম নেয়। বেশি বড় বলে এগুলির স্বাদ তেমন নেই। মঠে এই কুমড়া অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকে।

পাট্রিসিয়া ও তার বড় বোন হান্না এবারও হ্যালোইন উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভিতরের অংশ বের করে কিছুদিন রোদ্রে শুকিয়ে নাইফ দিয়ে ডিজাইন করা হবে। তারপর পাড়া-প্রতিবেশিরা মিলে ঐতিহাসিক এই উৎসব পালন করবে। নিম্নের ছবি পাট্রিসিয়াকে কাঁধে করে মিষ্টি কুমড়া আনতে দেখা যাচ্ছে।

আমার ভাবনাগুলি

2019-10-16 10:55:30 | poem
জাপানে তাইফুন হাগিবির প্রলয়কান্ড

গতকাল আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। কিন্তু সাইতামা বিভাগে বায়ুতে বেগ ছিল না। সারাদিন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা পাঁচটায় সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখি - যে কাউন্টারে ব্রেড, কেইক ও অন্যান্য খাবার দ্রব্য থাকে সেগুলি শুন্য। সব খাবারের আইটেম বিক্রি হয়ে গেছে। কারণ, বিগত ছয় দশক এত বড় তাইফুন প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়নি। জাপান আবহাওয়া দপ্তর প্রতি ঘন্টায় লোকজনকে হুশিয়ার করে দিচ্ছে এবং নিকটস্থ শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলছে। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকার শহরগুলির অধিবাসিদের্। জাপানে চার দশকের জীবনে অনেক তাইফুন দেখেছি। কিন্তু দুদিন পূর্বে সৃষ্ট তাইফুন মহাসগরের দিক থেকে জাপানের দিকে এগুচ্ছে ঘন্টায় ৩৫ কিলোমিটার বেগে। কিন্তু বাতাসের গতি ঘন্টায় ১৪৪ কিলোমিটার। গতকাল আমার শহর এলাকায় বায়ুর বেগ বেশি না থাকায় জুম্মা নামাজে মসজিদে অনেক লোক সমাগম হয়েছে। সন্ধ্যায় আরেকটি সুপার মার্কেটে ব্রেড কিনতে গিয়েও কিছু পাইনি। জাপানিরা এসব ডিজাস্টারের ব্যাপারে বেশি সজাগ। কারণ, দুদিনের বেশি থাকবে এই তাইফুনের প্রভাব। তাই আগাম কেনাকাটি করে রেখেছে। আমি চিন্তিত নই দেখে আমার স্ত্রী অবাক। প্রশ্ন করল, 'তোমায় ভয় লাগছে না?'
জবাবে বললাম, "বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের ভয়ংকর সাইক্লোন আমি দেখেছি। দশ লক্ষ লোকের প্রাণহানি হয়েছিল সমুদ্র উপকূলে। ওজনে দশ টন হবে একটি পুরানো সেগুন গাছ ব্রিটিশ আমলে তৈরী বিল্ডিংয়ের উপরে উড়ে এসে পড়েছিল। আমরা মরিনি। চার দশকে সাইতামাতে এমন কোন তাইফুন দেখিনি। ভয় পাব কেন?"

সারাদিন কিছু লেখালেখি করেছি। টিভির কাছে গিয়েও বসিনি। এদিকে আমার স্ত্রী উপর তলা ও নিচতলায় দৌড়াদৌড়ি করছেন। খবর শুনছেন।

জাপানে অক্টোবরের দিকেই বেশি তাইফুন হয়। প্রাচীন কালে চীনারা তাইফুন ড্রাগনেরা সৃষ্টিকরে মনে করত। জাপানীরাও এক হাজার বছর পূর্বে তাই মনে করত।

তাইফুনটির নামকরণ করা হয়েছে HAGIBI, এটা হল চলতি সালের ১৯ নম্বর তাইফুন। ইতিমধ্যে চিবা বিভাগের ইচিহারা সিটির উপর এসে সেটা টর্নেডুর আকৃতি নেয় এবং কিছু ঘরবাড়ি চূর্ণ করে দিয়েছে। সিজুওকা ও গুনমা বিভাগে পাহাড় ধ্বসে পড়েছে। আমার পার্শবর্তি শহর মরুইয়ামাতে লোকজন ফ্লাডের ভয়ে বহুতল বিশিষ্ট শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। কারণ শহরটিতে পর্বত বেশি। সে এলাকার পানি ফুলে ফেঁপে ফ্লাড হয়। নদীর বেড়িবাঁধ ডুবে যায়।

জাপানে ভয়ংকর তাইফুনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মাত্রা হল ৫। অদ্য বিকাল তিনটায় পাঁচ মাত্রা সংকেত দিয়েছে।
বর্তমানে হাগিবি কান্তো অর্থাৎ টোকিও সাইতামা এলাকায় আঘাত করেছে। একটি সংবাদে বলা হয়েছে যে তাইফুনের জোর এখন কমছে।

তাইফুন এবং ঘুর্নিঝরে যে ব্যতিক্রম, তা হল - তাইফুনে অধিক বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু সাইক্লোনে কম বৃষ্টিপাত হয়। সে জন্য সাইক্লোনে বায়ুর বেগ ঘন্টায় ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়। ফলে বাড়ি ঘর অধিক ক্ষতগ্রস্থ হয়। তাইফুনে সুমুদ্রের উপকুলস্থ এলাকা বেশি ক্ষতগ্রস্থ হয়। বৃষ্টিপাত বেশি হয় বলে বায়ুর বেগ সাইক্লোনের মত বেশি বাড়ে না। তবে হাগিবির বেগ ঘন্টায় ১৪৪ কিলোমিটার ভয়ংকর। তাইফুনের সময় ভূমিকম্প হলে পাহাড়ের ধ্বসে প্রাণহানি বৃদ্ধি পায়।
নিচের ফটো জাপান নিউজ থেকে নেয়া হয়েছে।
১২ কটোবর ২০১৯

জাপানে তাইফুন হাগিবির তান্ডব
(দ্বিতীয় পর্ব)
আরশাদ উল্লাহ্‌

নাগানো বিভাগটি মধ্য জাপানের কান্তো এলাকাতে। এই এলাকাতে টোকিও, সাইতামা, কানাগাওয়া ও চিবা বিভাগ ছাড়াও আরো কয়েকটি বিভাগ আছে। নাগানোর অধিকাংশ এলাকা পার্বত্য অঞ্চল। প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলিতে সমৃদ্ধ নাগানোতে 'উইন্টার অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছে'। কারণ, শীতকালে প্রচুর তুষারপাত হয় নাগানোতে। প্রায় সবগুলি পর্বতের চূড়া বরফে সাদা হয়ে যায়। উইন্টার অলিম্পিকের জন্য উপযুক্ত স্থান নাগানো বিভাগ। টোকিও থেকে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও বুলেট ট্রেনেরও চলাচল আছে। তাইফুন - ১৯ কে 'হাগিবি' নাম দেয়া হয়েছে। দুদিন যাবত তাইফুন ও ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের কারণে নাগানোর 'চিকুমা নদীর' পাকা বেরিবাঁধ পাহাড়ি ঢলের খরস্রোতা পানির চাপে ভেঙ্গে গিয়ে বিশাল এলাকার আবাসিক এলাকাটি মুহূর্তে ডুবে যায়। বাড়ির দুতলায় পানি উঠেছে। আগে থেকেই সরকার সমুদয় ব্যবস্থা করে রেখেছিল। কিন্তু বেরিবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়াতে ফায়ার সার্ভিস, জাপান ডিফেন্স ফোর্স ও পুলিশের গাড়ি আবাসিক এলাকাটিতে আবদ্ধ পরিবারগুলিক উদ্ধারে যেতে পারছিল না। তাই হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। নিম্নের ফটোতে প্লাবিত এলাকার চিকুমা নদী দেখা যাচ্ছে। গতকাল থেকে সব ধরনের ট্রেন সার্ভিস বন্ধ ছিল। বুলেট ট্রেন পার্কিং করার স্থানও প্লাবিত হয়েছে। হাইওয়ের উপর থেকে বৃহদাকার একটি ক্রেন তাইফুনে ভেঙ্গে পড়েছে। শতাব্দির বৃহত্তম এই তাইফুনের জন্য সরকার সব রকম ব্যবস্থা করে রেখেছিল। সত্তর মিলিয়ন লোকের খাবার সহ অন্যত্র সরিয়ে নিবার বন্দোবস্ত ও শেল্টার করেছে। কিন্তু সরকারি শেল্টারে মাত্র ৫০,০০০ জন আশ্রয় নিয়েছে। ট্রেন চলাচল আজ দুপুর থেকে শুরু হবে।

এই তাইফুনে নিহত হয়েছেন ১৪ জন এবং ১২ জন মিসিং খবরের কাগজে প্রকাশ পেয়েছে।
নিম্নের ছবিগুলি নেট পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
১৩ অক্টোবর ২০১৯




poem কবিতা

2019-10-16 10:52:19 | poem
প্রাতের অন্ধকার
আরশাদ উল্লাহ্

ভারি বৃষ্টিতে - প্রাতের অন্ধকার-
বড় অসহনীয়, কিছু ইচ্ছার মৃত্যু,
স্বপ্নে যাকে দেখে ভোরের আলোতে
কলম আর খাতা খুঁজি কবিতা লিখার।
সে অনুভূতি ভিন্ন স্বাদের গুপ্ত কামনা,
সদ্য ফুটন্ত - প্রভাত পদ্মকলির মতো
কিশোরীর বিনম্র মুখ, এক স্বপ্নকন্যা।

পদ্মার পাড়ে একা পানসিতে বসা
ভোর বায়ুতে উড়ে - দুরন্ত উড়না,
চোখেমুখে সাগরের দুর্দান্ত নীলিমা,
যে চোখে পড়েছে শঙ্খচিলের ছায়া,
আহা কি যে তার গভীর মমতা মায়া,
ক্ষণস্থায়ী জীবনের - নীল স্বপ্নকন্যা।

পানসিতে রূপসীর হাতে নীল চুড়ি
রূপালী ঢেউয়ে শ্বেত ফেনার কুঁড়ি,
স্বপ্নকন্যার মমতার বন্যাতে ভেসে
তার পানসিতে পা রাখার আগেই-
ব্জ্রঝড়ে স্বপ্নভগ্ন; শূন্য ঘরে আমার-
কবিতার খাতা আর কলম খুঁজে মরি।


৩ অক্তোবর ২০১৯

poem কবিতা

2019-10-02 17:53:47 | poem

নক্ষত্র জগতে
আরশাদ উল্লাহ্‌

রাতের আকাশে কিছু নক্ষত্র দেখে মনে হয়
তারা কি একাকিত্বে ভোগে – বড় নিঃসঙ্গ,
বন্ধুবিহীন স্বজন হারা?
একই আকাশে তবু, মনে হয় কেউ কারো নয়।
দ্যুতিময় - ভাস্কর নক্ষত্র আকাশে অনড় অটল,
শরতের রাতে নিত্য অন্ধকারে দীপ্তিময় গগনে
নক্ষত্র জগতে প্রেম কি তবে বিলুপ্ত বিরল?

রাত্রির উদ্ভাসনে জেগে ভাবনার জগতে ভাসি,
তারাদের বিষণ্ণতা শত মানুষের মনের আকুতি,
প্রেম যে অনন্ত অনুভূতি - যেন তরুণীর হাসি।
শরতের শিউলি ঝরে পড়ে, নক্ষত্র পায় তার ঘ্রাণ,
রাতের তিমিরে ঝরা পাতার শব্দের মতো নিরবে-
কুয়াশা ছিড়ে শিশির ভিজা পায়ে হেঁটে হঠাত এসে-
জানালার পাশে দাঁড়ায় জোস্না - পুস্প হাতে অরবে।
স্বীয় অবস্থানে নক্ষত্র রাশি - লাখো আলোক বর্ষদূরে,
কানে কানে বলে গেল আমাকে, “প্রেম অনন্ত, শ্বাশত,
পৃথিবী নক্ষত্র রাশি তাই যুগ যুগান্তে জ্বলে আর পুড়ে!”

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আমার ভাবনাগুলি

2019-10-02 17:45:53 | poem
হৃদরোগ
Myocardial infarction
আরশাদ উল্লাহ্‌

আমার বন্ধু মহলের প্রায় সবাই জানেন যে কয়েকবার মারাত্মক অসুস্থ হয়ে এম্বুলেন্সে বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অতিথি হয়েছি। ছাত্র জীবন থেকেই আমি একজন ক্রনিক হৃদরোগী। আমরা সবাই রোগমুক্ত থাকতে চাই। তা সম্ভব হয় না। প্রতিটি লোক জীবনে একাধিকবার রোগে আক্রান্ত হন। সে রকম আমিও একজন। এটা আমাদের সবার নিয়তি। তবে রোগের একটা সীমাবদ্ধতা থাকা দরকার। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে সে সীমাবদ্ধতাও থাকে না। আমি ক্রনিক হৃদরোগী। মাঝে মাঝে নিজেকে ধিক্কার দেই। কিন্তু যখন আমার চেয়েও আরো বেশি রোগাক্রান্ত লোক ও প্রতিবন্ধীদের দেখি - তখন নিজেকে প্রবোধ দেই।

ছাত্রজীবনে আমার হৃদকম্প (Atrial fibrillation) ছিল। বয়স কম ছিল বলে বড় বেশি পাত্তা দেই নি। কিন্তু আমার মা জননি ও বড় ভাই বোনেরা আমার জন্য চিন্তিত থাকতেন। ডাক্তার বদলিয়ে অন্য ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতেন। তখন পাকিস্তান আমল। ডাক্তারগণ ছিলেন সিরিয়াস। ব্যতিক্রম যে ছিলনা তা নয়। তবে সিরিয়াস ডাক্তারের সংখ্যা সে আমলে বেশি ছিল। যাদের নিজ চোখে দেখেছি। তারা রোগীর পকেটে কত টাকা আছে জিজ্ঞাসা করতেন না। রোগ ধরার জন্য উঠে পড়ে লাগতেন। সেই আমল থেকে বর্তমান জমানার তফাৎ ৫০ বছর। এখন বিজ্ঞানের বদৌলতে অনেক উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। উন্নত দেশগুলিতে অর্গান ট্রান্‌স্প্লান্ট ও করা হয়।

আজকের লেখায় আমার হৃদরোগের সাথে অব্যাহত যুদ্ধ করে যাওয়ার কথা কিছু বলব। এ লেখা পড়ে অনেকে উপকৃত হবেন আশা করি।
হৃদরোগ অনেক প্রকার। আমার হার্টের রোগটা যখন দেখা দেয়, তখন "অস্বাভাবিক হার্ট বিট" - কখনো দ্রুত, কখনো থেমে থেমে হত। ১৯৭০ এর দশকে উন্নত ঔষধ ও চিকিৎসা যে ছিলনা তা বলাই বাহুল্য। আমার রোগ দেখা দেওয়ার পর এম বি বি এস বা এল এম এফ পাশ নয়, অথচ অত্যন্ত জনপ্রীয় একজন ডাক্তারের নিকট গেলাম। তাঁর নাম ছিল বিনয় ভূষণ দেব। বৃদ্ধ ডাক্তার। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত ডাক্তার ছিলেন। যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন সর্দি বা এলার্জি হলে তাঁর নিকট যেতাম।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর চট্রগ্রামে তাঁর ক্লিনিক খুঁজে পেলাম। কোন ব্লাড টেস্ট, এক্স-রে ছাড়াই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে মাত্র একটি টেবলেট দিলেন। সেটা সেবন করে কয়েক বছর ভাল ছিলাম। ইতিমধ্যে এই ডাক্তার মৃত্যু বরণ করেছেন। বলাই বাহুল্য যে আমার এই রোগের কথা ঘরের সদস্যরা ছাড়া কেউ জানত না। আমিও কাউকে বলতাম না। পড়াশুনা, খেলাধুলাও করতাম। ১৯৮০ সালে জাপানে আসার আগ পর্যন্ত কোন ডাক্তার আমার রোগ নির্নয় করতে পারেন নি এবং আমাকে কোনদিন বলেন নি যে তোমার হৃদরোগ।

১৯৮০ সালে পি এইচ ডি প্রোগ্রামে জাপান আসার পর আমার রোগের কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। আমার অসুস্থতার কথা কোনদিন আমার টীচারকেও বলি নি। কারণ, জীবনের নিকট পরাজয় মেনে নিতে চাইনি আমি। ১৯৮৪ সালে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করার পর দু'বছর গবেষোণাগারে চাকুরিরত ছিলাম।

১৯৮৬ সালে প্রথম বড় ধরণের হার্ট এটাক হল। কিন্তু ব্যথা নেই। ভোর ৪টা বাজে। প্রথমে স্ত্রীকে নিদ্রা থেকে জাগাই নি। ভেবেছি কিছুক্ষণ পর হার্ট-বীট নরম্যাল অবস্থায় ফিরবে। কিন্তু আধা ঘন্টাতেও ফিরলনা দেখে স্ত্রীকে এম্বুলেন্স ডাকতে বললাম।

ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, Atrial fibrillation. তারপর ৬ দিন হাসপাতালে আই সি ইউ তে ছিলাম। কোন ওপারেশন হয়নি। তবে সব ব্যবস্থাই রেডি ছিল। ছয় দিনের দিন ডাক্তার ঔষধ দিয়ে আমাকে রিলিজ অর্ডার দিলেন। তারপর ২০১২ সালে নিউমোনিয়া হয়েছিল। আর, গত জুলাইয়ের ২৮ তারিখ রাতে ৩২ বতসর পরে আবার হার্ট এটাক হল। এবার সর্ব প্রথম হার্টে ব্যথা অনুভব করলাম। রাত ২টায় হাসপাতালে এম্বু‌লেন্সে গেলাম। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, Myocardial infraction, অবাক হলাম, এতদিন চিকতসা চলছিল Atrial fibrillation এর। এখন আমি ভিন্ন জাতের হার্টের রোগী। পুর্বে 'ব্লগ' কথাটি উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু তা নয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নতুন ডাক্তার পরীষ্কার করে বুঝিয়ে দিলেন 'ব্লগ' নয়, Myocardial infarction.!
পাঁচটি ব্লগের কথা উল্লেখ করেছিলাম। ২৮ জুলাই ডাক্তার সহজ ভাষাতে ব্লগ বলেছিলেন। ( হ্যাঁ, এটাকেও এক ধরণের ব্লগ বলা যেতে পারে।)

Myocardial infarction কি ধরণের হার্টের রোগ এ ব্যাপারে সামান্য ধারণা দিতে চাই। হার্টের অনেক আর্টারি, ভেইন রয়েছে। সেগুলিতে রক্ত সঞ্চালন হয় এবং হার্টকে সুস্থ রাখে। কোন কারণ বশত যদি সেগুলিতে রক্ত সঞ্চালনের ব্যাঘাত হয় তখন ব্যথা শুরু হয় এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমে কম ব্যথা হয়। পরে আস্তে আস্তে বাড়ে। বিশ্রাম নিলে কমে যায়। (আমার বেলাতে প্রথম অবস্থায় এমন হয়েছিল।)

২৮ জুলাই রাতে ব্যথা কমেনি বরং ক্রমাগতভাবে বাড়ছিল। তাই রাত ২টায় হাসপাতালে ভর্তি হলাম। এদেশের হাসপাতালে ডাক্তার এবং নার্সগণ সৈনিকের মত প্রস্তুত থাকে। রোগী যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলম্ব না করে রোগী নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকে।
পরীক্ষা শেষে ১১ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। কোন রিং সেট করেনি। তার ঢুকিয়ে জ্যাম হয়ে যাওয়া আর্টারিগুলিটে বিশেষ ঔষধ স্প্রেকরে পরীষ্কার করে দিলেন ।

জ্যাম হয়ে যাওয়া আর্টারি বা ধমনি যথাশীঘ্র পরীষ্কার না করলে এবং রক্ত সঞ্চালিত না হলে খোদ হার্টের টিস্যু মরে যায়। এমন অবস্থা হলে পরিত্রাণের কোন উপায় থাকে না।

২০১৫ পর্যন্ত আমেরিকাতে ১৫.৯ মিলিয়ন লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং বছরে ১০ লক্ষ লোক আক্রান্ত হয়।

আমেরিকার এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে মহিলারা ৬৫ বৎসর এবং পুরুষেরা ৪৫ বৎসর বয়সের পর Myocardial infarction রোগে আক্রান্ত হয়। এই ব্যবধানের কারণ জানা যায় নি। তবে এই রোগ অতিরিক্ত মদ্যপানে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস,অতিভোজন ও তৈলাক্তজাত খাবার বেশি খেলে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মধ্য বয়স্ক লোক, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং গড়ে এক ঘন্টা সকাল বিকাল হাঁটাহাঁটি করেন - তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

দীর্ঘকাল রোগাক্রান্ত থেকেও বিশেষ করে হৃদরোগ নিয়ে কি করে এখনো বেঁচে আছি? নিজেই বার বার নিজেকে প্রশ্ন করি। লেখাপড়ার পর্ব এই রোগ নিয়ে করেছি। কষ্ট হয়েছে। কিন্তু টীচারকে বুঝতেও দেই নি।
যারা হৃদরোগে আক্রান্ত তাদেরকে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ দিতে চাই। হয়তো আমার পরামর্শে তারা উপকৃত হবেন।

১। শুধু মাত্র ডাক্তার ও ঔষধ সেবনে সুস্থ থাকা যায় না। নিজেকেও সচেতন থাকতে হবে। দুর্ভাবনা না করে ডায়েরি লিখা, বই পড়া, গল্প লেখা, গান গাওয়া বা প্রিয় গায়কের গান শোনা, প্রিয় জনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, ভালবাসা বজায় রাখা, শিশুদের আদর করা ও তাদের সাথে খেলাধুলা করা, ভাল ও সুন্দর মনের মানুষের সাথে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব স্থাপন করা। বন্ধুদের সাথে কথা বলে মানসিক ক্লান্তি সারানো যায়।

২। ব্যায়াম করা, হালকা ব্যায়াম, হালকা খাবার, মিষ্টি কম খাওয়া, সবজি ও মাছ বেশি খাওয়া। ছোট মাছ খাওয়া; পুটি শুঁটকি জাতীয় ছোট মাছের শুঁটকি সবজির সাথে রান্না করে খাওয়া। সকালে ২ গ্লাস পানি পান করা। ঘুমাবার পূর্বেও এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাওয়া।

৩। পশু পাখিকে ভালবাসা এবং যত্নের সাথে পোষা। ছাগল, কুকুর, বিড়াল এবং মুরগি পালন করা। এগুলি কেন করতে হবে ভেবে দেখুন। মনে রাখবেন যারা সারাক্ষণ রোগের চিন্তা করেন তারা বেশিদিন বাঁচেন না। এই পোশা পশু পাখি আপনাকে ব্যস্ত রাখবে এবং মানসিক ক্লান্তি কমে যাবে।

৪। নামাজ পড়া। অন্তত এশার নামাজ নিবিষ্ট মনে পড়লে রোগের উপশম হবে। দুর্ভাবনা কমে যাবে এবং ভাল ঘুম হবে।

পৃথিবীতে সবাইকে মরতে হবে। তবে সুস্থ থেকে সবাই যাতে পূর্ণ হায়াত পেয়ে মৃত্যু বরণ করেন - এই কামনা করি।

*All rights reserved by the writer.
2 October 2019
No photo description available.