THE POEMS OF ARSHAD ULLAH IN BENGALI

PLEASE READ MY POEMS AND OTHER WRITINGS

আমার ভাবনাগুলি

2019-09-02 14:58:56 | Weblog
জাপানে দারিদ্রতা
(নিজস্ব মতামত)

দেরীতে হলেও গতকালের দৈনিক প্রথম আলোতে আমার আকাঙ্ক্ষিত একটি সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। শিরোনামঃ

"জাপানের সুপ্ত দারিদ্র্য: কিছু অজানা তথ্য!"

খবরটি অনেক জাপান প্রেমিকদের মনঃপীড়ার কারণ হতে পারে। ১৯৮০ সালে দেশটিতে পদার্পণ করে সর্বত্র যে নান্দনিক দৃশ্যাবলি শহরে গ্রামে, উৎসবে-পরবে, যে সামাজিক রীতিনীতি ও অর্থনীতিতে প্রগতি দেখেছি। তা ছিল আমার নিকট বড় বিস্ময়। নারী শিশু জনতার কলরব, আনন্দ উচ্ছ্বাস, ঘরে ঘরে বাবল ইকোনমির ফসল।রাতারাতি কারখানা স্থাপন। আর, ছোট একটি কারখানা রাতারাতি জায়ান্ট কারখানাতে পরিণত হওয়া । আর, সে কারখানাটিকে কেন্দ্র করে পাশাপাশি ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ফলে বুদ্বুদ অর্থনীতির উদ্ভব হয়েছিল। এখন আর সে অবস্থা নেই। কেন নেই? অনেকের মনে এখন অনেক প্রশ্ন।

গতকাল জাপানে শ্রমিক হিসাবে আসতে আগ্রহি একটি শিক্ষিত যুবক 'ওয়েব জিন' থেকে একটি প্রকাশিত সংবাদের লিঙ্ক দিয়ে আমার মতামত জানতে চেয়েছে। সেটা 'জাপানে শ্রমিক আনার প্রকাশিত সংবাদ।" এই যুবকটির মত আরো অনেকে আমাকে জাপানে উচ্চশিক্ষার্থে আসার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছে। তাদের যথাসম্ভব আমি অবগত করেছি। কিন্তু গতকাল রাতে যে যুবকটি জাপানে শ্রমিক হিসাবে আসার স্বপ্ন দেখছে। তাকে উত্তর দিলাম যে, তোমার লিঙ্কটি পড়েছি। এই ব্যাপারে পরীষ্কার ধারণা আমার নেই। আলোচনা হচ্ছে শুনেছি। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনার ব্যাপারে কিছু জানি না। অপেক্ষা কর। পরে অবগত হয়ে জানাব।

এ কথা সত্য যে তিন বৎসর পূর্বে জাপান সরকার বিদেশ থেকে শ্রমিক আনার ব্যাপারে এবং অধিকতর বিদেশি ছাত্র জাপানে এসে পড়াশুনার জন্য একটি সার্কুলার দিয়েছিল। কিন্তু প্রথমে তাতে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে নি। আমার মত পুরানো যারা বিগত তিন চার দশক জাপান প্রবাসি - তারাও একথা শুনে চোখ কপালে তুললেন।
পরে অবশ্য নাম কা ওয়াস্তে সবার শেষে বাংলাদেশের নাম সংযুক্ত করেছে।

গত পরশু এক বন্ধু জানালেন যে তার সন্তান যে কোম্পানিতে জব করছে - সেটাতে ভিয়েতনামি শ্রমিক এসেছে।
কথাটি অমূলক নয় মনে হয়েছে। প্রথম দিকে জাপান সরকার নীতি নির্ধারণ করেছিল যে চীন ও ভিয়েতনাম থেকে শ্রমিক বা ছাত্র আসার অগ্রাধিকার দিবে। কারণ কি? অনেকে ভাবতেও পারবে না যে জাপানিদের বর্ণ প্রীতির ব্যাপারটি। কারণ সেটাই। পরবর্তি পর্যায়ে
দক্ষিণ এশিয়া থেকে নেপালের নাম স্থান পেয়েছিল। দেখতে দেখতে নেপালিদের রাস্তা ঘাটে দেখতে পেলাম। তার আরো কয়েক বছর পরে আমার নিকটস্ত শহরের ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলে কিছু বাঙ্গালি ছাত্র দেখতে পেলাম। অবস্থার কিছু পরিবর্তন হচ্ছে আন্দাজ করলাম।
কিন্তু লক্ষ করলাম যে ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স শেষ করার পরে তাদের চাকুরির কোন সুযোগ নেই। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চাকুরির করার উপর বাধা বিপত্তি থাকা ঠিক নয়। জাপান সরকারের নীতিতে এমন ফাঁকফোকর অনেক লক্ষ করেছি।

সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থার উপরে যারা গবেষণা করেন তারা সরকারের ত্রুটিগুলি দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু জাপান সরকার তার পর্বত প্রমাণ ট্যাক্সের টাকা দেখে জাপানকে গরীব ভাবতে পারছেন না। দক্ষ কৃষকেরা কৃষি কাজ ছেড়ে দিচ্ছে। এ দেশের নিয়মে কৃষকের জ্যেষ্ঠ পুত্র - তার পিতা বৃদ্ধ হলে সব কৃষিকাজের দায়ীত্ব নেয়। কিন্তু আজকের কৃষকের সন্তান কৃষিকাজ করতে নারাজ। তাই কৃষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সে শূন্যস্থান পূর্ণ করতে বিদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক বা কৃষক আনলে অবস্থার পরিবর্তন হবে। জাপান সরকারের মাথায় যে এ ভাবনা নেই তা নয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে জাপানিরা বেশি দেরী করে ফেলে। উল্লেখ্য যে জাপানের ৬০% জমিন অনাবাদি রয়েছে।

আজ থেকে ১০০ বৎসর পূর্বে পরিবার কেন্দ্রিক ছিল জাপানের সমাজ ব্যবস্থা। সে প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরে একটি পরিবারে যদি চারটি সন্তান থাকে। কর্মক্ষম হয়ে তারা পিতামাতাকে ছেড়ে চলে যায়। নামকা ওয়াস্তে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। পরবর্তি পর্যায়ে ভাই বোনের মধ্যেও সম্পর্ক থাকে না। চাচাতো মামাতো ফুফাতো খালাতো ভাইবোনদের চেহারাও তারা ভুলে যায়। চল্লিশ বৎসর প্রবাসে থেকে এমন অবস্থা দেখে আসছি। সে কারণে বৃদ্ধাবস্তায় পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়। তবে সবাই সেখানে যেতে পারে না। যাদের অর্থ আছে তারাই যায়। অন্যান্যরা বৃদ্ধকালে একাকি ঘরেই থাকে। বৃদ্ধরা তো হাঁটাচলা করতে পারলে রান্নাকরে খেতে পারে। যারা পারে না - তাদের অনেকে ঘরেই মরে পড়ে থাকে।

জনসংখ্যা ও শিশুর ঘাটতির জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক হাই স্কুল্গুলিও যখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে – তখনও সরকার এই জটিল অবস্থার মোকাবিলা করে নি। ১৯৯০ এর দশকে জাপানে প্রচুর ল্যাংগুয়েজ স্কুল ছিল। সেগুলিতে বিদেশি ছাত্রছাত্রির অভাব ছিল না। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থাও ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বিদেশি কিছু অবৈধ শ্রমিক দেখে সরকার তাদের বিতারণ করে দিল। ফলে শ্রমিকের অভাবে কারখানাগুলি চীনে ব্যাপক পূজিবিনিয়োগ করতে থাকে। চীনারা সে সুযোগ কাজে লাগায়। অনেকের মতে জাপান দেশটিই একটি ব্রান্ড নেইম। সেই জাপানের জায়ান্ট কারখানাগুলি থেকে তৃতীয় শ্রেণীর ফ্যাকটরিগুলিও চীনে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। বিশ্ববিখ্যাত ক্যামেরা, টিভি, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস ইন্ডাস্ট্রিগুলি বিদেশে তাদের ব্রান্ড নেইমও বিক্রয় করে দিল। তার সুফল পেল চীন। জাপানের কাঁধে ভর করে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক জায়ান্টকে নক আউট করে চীন সে স্থানে এল।

জাপানি কোম্পানিগুলি যখন চীন থেকে তাদের প্রোডাক্টস এনে বাজারে ছাড়ল। তখন জাপানিদের পকেটে সেগুলি কিনার পয়সা নেই।
জাপানের গ্রাম্য শহরগুলির দোকান পাট অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেল।
শিশুর সংখ্যা কমে গেল এবং বৃদ্ধের সংখ্যা বেড়ে গেল।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ থেকে দেশটিকে গড়ে নিয়ে যখন জাপান বিশ্ববাসিকে তাক লাগিয়ে দিল। তখন পশ্চিমা দেশের গবেষকগণ জাপানকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছে।

কথায় অনেক কথা আসে। প্রবাসে থেকে এসব কথা বলা ঠিক না। তবে লক্ষ করেছি যে জাপান সরকারের কিছু ভুল ভ্রান্তির জন্যই দেশটির অর্থনৈতিক অবনতি হয়েছে।

গতকাল বাংলা পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে যে জাপান বাংলাদেশ সহ আরো অনেক দেশ থেকে শ্রমিক আনবে। সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে বলতে হবে। তবে আমি শত ভাগ এ কথায় আশ্বাস রাখতে পারছি না। জাপানীদের মধ্যে বর্ণপ্রীতির দুর্বলতা আদিকাল থেকেই। যে সকল দেশ থেকে শ্রমিক আনবে পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে – সে সকল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নবম স্থানে। বর্ণপ্রীতি ভুলে দক্ষ শ্রমিক দেশটিতে আসুক মনে প্রাণে কামনা করি।

সর্বশেষে একটি কথা না বলে পারছি না। জাপান যদি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ধারণা নিত তাহলে এতটা অবনতি হত না। বৃটেন থেকে যদি কিছু ধারণা নিত – তাহলে হয়তো জাপান এখনো অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর দেশ হিসাবে দ্বিতীয় স্থানেই থাকত।

৩০ আগষ্ট ২০১৯

コメントを投稿